অবিশ্বাস দূর করার পরীক্ষায় সাইফউদ্দিন

ছবি: ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও ১০-১২ বছর সেবা দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের, এমন বিশ্বাস ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার। কিন্তু সাইফউদ্দিনকে নিয়ে দলে অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। তাঁর কিছু কার্যকলাপ সকলের কাছে তাকে অবিশ্বাসী করে তুলেছে।
চোটের কথা বলে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেননি সাইফউদ্দিন। সত্যিই তার চোট আছে নাকি নটিংহ্যামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই ভান করছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন? এমন প্রশ্নে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোলিং করার সময় পিঠে ব্যথা পান সাইফউদ্দিন। যদিও ম্যাচে প্রাথমিক কোনো চিকিৎসা নিতে দেখা যায়নি তাকে। টন্টন থেকে নটিংহ্যামে এসেই সবাই জানতে পারেন সাইফউদ্দিনের পিঠে ব্যথা।
এটা অবশ্য তাঁর পুরনো ব্যথা নয়। সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও সাইফউদ্দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন পিঠের ব্যথায়। ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি তিনি। সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করতে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের জন্য। ওটায় গড়বড় হলে ফাইনালে ওঠার অঙ্ক কঠিন হতে পারত। সৌভাগ্যক্রমে সে রকম কিছু হয়নি। এমন ম্যাচে খেলেননি এই অলরাউন্ডার। অথচ সেই সাইফউদ্দিনই দুদিনের ব্যবধানে ফাইনালে খেলেছেন। যদিও বল হাতে পুরো সিরিজজুড়েই দুর্দান্ত ছিলেন এই পেসার।

ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের একটি ঘটনা তিক্ততা ছড়িয়েছে দলের লিডারশিপ গ্রুপের মাঝে। মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন সাকিব আল হাসান। সে ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের সব বোলারকেই পিটিয়েছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যখন খেপাটে স্টাইলে খেলছে, এমন সময় বোলিংয়ে ডাকা হয় সাইফউদ্দিনকে। কিন্তু তখন বল মাটিতে আছড়ে ফেলে ভাব দেখান তিনি, যে আচরণ একেবারেই মনে ধরেনি মুশফিকুর রহিমের।
অধিনায়ক সাকিব সে সময় না দেখলেও পরে জানতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কারণ তাঁর বিশ্বাস বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম এখন প্রাপ্তবয়স্কদের দখলে। এখানে হাতে-কলমে কাউকে শেখানোর নেই। কেউ শিখতে এলে স্বাগতম। আর যদি কেউ না আসে, সেটা তাদের ব্যাপার।
সাইফউদ্দিনের ভান ধরার রহস্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকেই শুরু হয়েছিল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলা এই অলরাউন্ডার গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে হালকা চোট পেয়েই মাঠ ছেড়ে দেন। প্রয়োজনের সময় তিনি বোলিং করতে অনীহা প্রকাশ করলে ড্রেসিং রুম থেকে তাঁকে সতর্ক করা হয়।
তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) পিঠে চোট পেয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ডান হাতে টেনিস এলবোর সমস্যায় ভুগেছেন তিনি। ব্যাটিং-বোলিং করতে সমস্যা না হলেও লং থ্রো করতে পারেন না সাইফ, যে কারণে ৩০ গজের ভেতরে ফিল্ডিং করান হয়েছিল তাঁকে।
ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ইনজেকশন আবশ্যক। ইনজেকশন দিলে তিন সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে সাইফউদ্দিনকে, প্রিমিয়ার লিগের খেলা থাকায় ইনজেকশন দেয়া হয়নি। বিশ্বকাপে এই সমস্যা না দেখা দিলেও পিঠের ইনজুরি ভোগাচ্ছে থাকে।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফির বক্তব্যে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে অবিশ্বাসের কোনো কথা পাওয়া যায়নি। পরবর্তী ম্যাচে সাইফউদ্দিনকে দলে চান মাশরাফি। অধিনায়কের প্রত্যাশা, তাঁকে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই দলে পাওয়া যাবে।
২০ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেছেন, 'ম্যাচের ভেতরে ফিজিও তাকে দেখার সুযোগ পায়নি। আশা করছি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্যই সে প্রতি ম্যাচে উইকেট নিচ্ছে, অনেক কঠিন সময়ে বল করে ব্রেক থ্রু এনে দিচ্ছে বা দ্রুত ব্রেক থ্রু দিচ্ছে। তো যে কোনো ইনফর্ম ক্রিকেটারকে দল অবশ্যই মিস করতে পারে। ওকে তো মিস করেছি অবশ্যই, আশা করি পরের ম্যাচ থেকে সে খেলতে পারবে।'
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তাঁর পিঠের ব্যথা থেকে একদিন সুস্থ হয়ে উঠবেন, মাঠেও ফিরবেন। তবে দলের ভেতর তাঁর সম্পর্কে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা কি দূর হবে খুব সহজেই?