ব্যাটারদের হতাশার দিনে আলো ছড়ালেন কেবল মুমিনুল

ছবি: ওয়ালটন

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশকে উড়িয়ে আইসিসির মাস সেরার মনোনয়ন পেলেন ওয়াসিম
৯ ঘন্টা আগে
টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার সময় দিনের প্রথম দুই ঘণ্টা টিকে থাকায় জোর দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ওপেনারা ঘণ্টা পেরিয়ে আউট হলেও প্রথম সেশনটা বেশ ভালোভাবেই শেষ করেছিল বাংলাদেশ। এরপরই যেন বদলে যেতে থাকে ম্যাচের দৃশ্যপট। উইকেটে আসা, ভালো শুরুর পর বিদায় নেয়া। বাংলাদেশের ব্যাটারদের সারাদিনের সারাংশটা যেন এমনই। ভিন্নতা ছিল কেবল মুমিনুল হকের ব্যাটিংয়ে। নিজের ফেরার ম্যাচে সতীর্থরা যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে তখন বাংলাদেশকে একাই টানলেন বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মুমিনুল দিনের শেষ বিকেলে তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ফিরলে বাংলাদেশ থামে ২২৭ রানে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের চেয়ে ২০৮ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১৯ রান।
বাংলাদেশের ২২৭ রানের জবাব দিতে নেমে প্রথম দিনের শেষ বিকেলে ভারতকে কোন উইকেট হারাতে দেননি লোকেশ রাহুল এবং শুভমান গিল। শুরু থেকেই বেশ দেখেশুনে ব্যাটিং করেছেন তারা দুজন। তবে এদিন রিভিউ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের লেংথ ডেলিভারি ব্যাটে-বলে করতে পারেননি রাহুল। তবে বল ব্যাটের খুব কাছে দিয়ে যাওয়ায় রিভিউ নেয় স্বাগতিকরা। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ও ব্যাটের মাঝে কোন স্পর্শ হয়নি।
এদিকে দিনের শেষ ওভারের প্রথম বলে রাহুলকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সাকিবের সোজা বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি তিনি। তবে আম্পায়ার আউট দিলে ততক্ষণাৎ রিভিউ নেন ভারতের অধিনায়ক। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প মিস করতো। তাতে বেঁচে যান রাহুল। দিন শেষে ডানহাতি এই ব্যাটার অপরাজিত রয়েছেন ৩ রানে আর গিল অপরাজিত ১৪ রানে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। তবে মোহাম্মদ সিরাজ ক্যাচ লুফে নিতে না পারায় জীবন পান জাকির। উমেশ যাদবের প্রথম বলেই ফ্লিক করেছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাতে লেগ সাইডে আউট হতে পারতেন শূন্য রানেই। এরপর অবশ্য ভারতের পেসারদের দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন তারা দুজন। তবে সুবিধা করতে পারছিলেন না দুজনের কেউই।
তাদের দুজনের টিকে যাওয়া জুটি ভাঙেন জয়দেব উনাদকাট। ইনিংসের ১৫তম ওভারে পঞ্চম বলে জাকিরকে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। উনাদকাটের লাফিয়ে উঠা লেংথ ডেলিভারিতে খেলার চেষ্টাই করেননি জাকির। তাতে গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় চার নম্বর স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেশ রাহুলের হাতে। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা তরুণ এই ব্যাটার এদিন আউট হয়েছেন ১৫ রানে। জাকির ফেরার পরের ওভারেই আউট হয়েছেন শান্ত।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট না চালিয়ে পা এগিয়ে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তাতে বল এসে সরাসরি আঘাত হানে শান্তর প্যাডে। ভারতের জোরালো আবেদনে আউট দিয়ে বসেন আম্পায়ার। অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে হওয়ায় তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন শান্ত। রিপ্লেতে দেখা যায় অল্পের জন্য বল অফ স্টাম্পে আঘাত হানে। তাতে আম্পায়ার্স কলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় ২৪ রান করা শান্ত। তাতে নিজেকে খানিকটা দুর্ভাগ্যবান মনে করতে পারেন তিনি।

৪ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাকিব এবং মুমিনুল। দেখেশুনে ব্যাটিং করার সঙ্গে বাউন্ডারিও মেরেছেন তারা দুজন। পেসারদের বিপক্ষে খানিকটা বেগ পেতে হলেও অশ্বিনকে বেশ ভালোভাবেই খেলেছেন তারা। লম্বা সময় ধরেই ব্যাট হাতে সাফল্য পাচ্ছেন না মুমিনুল। তবে দুই ম্যাচ বিরতি দিয়ে একাদশে সুযোগ পান বাঁহাতি এই ব্যাটার। সবশেষ ৯ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারা মুমিনুল এদিন ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন। এদিকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করেছেন সাকিবও। যদিও লাঞ্চের যাওয়ার আগের ওভারে ফিরতে পারতেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।
ভারতের ৪ ভেন্যুতে নারী বিশ্বকাপ, কলম্বোতে খেলবে পাকিস্তান
২ জুন ২৫
অশ্বিনের লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে ব্যাটে-বলে না হয়নি। বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে গেলে তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি ঋষভ পান্ত। স্টাম্পিং মিস করায় বেঁচে যান সাকিব। মুমিনুলের সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলেন তিনি। তবে লাঞ্চ থেকে ফিরে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। উমেশের লেংথ ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে ঠিকঠাক টাইমিং করতে না পারায় চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।
ফলে দলকে বিপদে ফেলে সাকিবকে ফিরতে হয়েছে ১৬ রানে। এরপর অবশ্য মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিম মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৮ রান। মুশফিককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন উনাদকাট। বাঁহাতি এই পেসারের গুড লেংথ ডেলিভারি মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে পান্তের গ্লাভসবন্দি হয়। অশ্বিনের এক ওভারে টানা তিন চার মারা মুশফিক আউট হয়েছেন ৪৬ বলে ২৬ রান করে। মুশফিক ফিরলেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল।
উনাদকাটের ওভারে দুই চার মেরে ৭৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৬তম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। লম্বা সময় অফ ফর্মে থাকা মুমিনুল ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। ছয়ে নেমে বেশ ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন লিটন দাস। খানিকটা দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। সিরাজের ওভারে পয়েন্ট দিয়ে চার মারার পরের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে পুল করে ছক্কা মারেন লিটন।
পরের ওভারে চার মেরেছেন অক্ষর প্যাটেলের ওভারেও। তবে লিটনকে খানিকটা বোকা বানিয়ে আউট করেছেন অশ্বিন। ডানহাতি এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে ফিল্ডার রাহুলের সোজা যাওয়ায় সহজ ক্যাচ লুফে নেন। দারুণ শুরু করা লিটন আউট হয়েছেন ২৫ রানে। প্রথম সেশনে রাত তুলতে বেগ পেতে হলেও দ্বিতীয় সেশনে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দিনের সেশনে ২৯ ওভার ব্যাটিং করে ১০২ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। তবে রান পাওয়ার সেশনে সাকিব, লিটন এবং মুশফিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারদের হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট থেকে বোলাররা বাড়তি সুবিধা না পাওয়ায় অনায়াসেই ব্যাটিং করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। উইকেটে এসে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছেন সবাই। তবে একমাত্র মুমিনুল ছাড়া কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে থিতুও হয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। উমেশের অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরের বল খেলতে গিয়ে পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫১ বলে ১৫ রান করা মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটার আউট হওয়ার পর থিতু হতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান।
উমেশের লেংথে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটে??? ফাঁদে পড়ে ৬ রানে আউট হয়েছেন তিনি। টিকতে পারেননি তাসকিন আহমেদও। উমেশের বলেই ড্রাইভ করতে গিয়ে সিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশকে একাই টানছিলেন মুমিনুল। সোহান-তাসকিনরা সঙ্গ দিতে না পারলেও সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে নিজের ফেরার ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাকে। অশ্বিনের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারি খেলার আগ্রহই দেখাননি মুমিনুল। তবে বল খানিকটা টার্ন করে মুমিনুলের গ্লাভসে লাগে।
পান্ত ক্যাচের আবেদন করতেই আউট দেন আম্পায়ার আর প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটতে থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। পুরোটা দিন দারুণ ব্যাটিং করা মুমিনুল শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে। ছন্দ ফিরে পাওয়ার ম্যাচে ১২টি চার এবং একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। মুমিনুল ফেরার পর উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন খালেদ আহমেদ। তাতে মা্রত ২২৭ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ভারতের হয়ে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন এবং উমেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ২২৭/১০ (৭৩.৫ ওভার) (শান্ত ২৪, জাকির ১৫, মুমিনুল ৮৪, সাকিব ১৬, মুশফিক ২৬, লিটন ২৫, মিরাজ ১৫)
ভারত (প্রথম ইনিংস)- ১৯/০ (৮ ওভার) (গিল ১৪, রাহুল ৩)