সুপার ওভারের নাটকীয়তায় জিম্বাবুয়ের দুর্দান্ত জয়

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ আগেই হেরে গিয়েছিল সফরকারী জিম্বাবুয়ে। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেটি তাই বাবর আজমদের জন্য ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। মুদ্রার উল্টো পিঠ অবশ্য ছিল জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে। এই ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর সুযোগ ছিল তাদের সামনে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই লক্ষ্য পূরণ করতে সফল হয়েছে সফরকারীরা। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে হারিয়েছে চামু চিবাবার দল। এদিন জিম্বাবুয়ের দেয়া ২৭৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৮ রানে থামে স্বাগতিক পাকিস্তান। ফলে দারুণভাবে নাটকীয় মোড় নেয় ম্যাচটি।
পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি। ডানহাতি পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির করা সুপার ওভারের প্রথম বলে কোনো রান নিতে পারেননি ইফতিখার আহমেদ। এরপর দুই এবং তিন নম্বর বল থেকে একটি করে রান দেন এই জিম্বাবুইয়ান। চার নম্বর বলে খুশদিল শাহকে বোল্ড করেন তিনি। ফলে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের সামনে মাত্র ৩ রানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে শাহিন শাহ আফ্রিদির করা সুপার ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে ব্যবধান কমান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন টেলর। দ্বিতীয় বলটি ডট হওয়ার পর তিন নম্বর বলে ২ রান নিয়ে দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন সিকান্দার রাজা।
এর আগে ম্যাচটিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। একটি ছক্কা এবং ১৩টি চারের সাহায্যে ১৩৫ বলে ১১৮ রানে অপরাজিত থাকেন ৩৪ বছর বয়সী উইলিয়ামস। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টেলরও। ৬৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন জিম্বাবুয়ের এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

উইলিয়ামস এবং টেলরের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের দিনেও বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন মোহাম্মদ হাসনাইন। ১০ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেন ২০ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া একটি উইকেট নেন আরেক পেসার ওয়াহাব রিয়াজ।
জিম্বাবুয়ের ছুঁড়ে দেয়া লক্ষ্যে খেলতে নামার পর দলীয় ৫১ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিক পাকিস্তান। এরপর ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে কিছুটা বিপদমুক্ত করেন অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু ৮৮ রানের মাথায় ডোনাল্ড তিরিপানোর বলে বোল্ড হয়ে ইফতিখার ফিরলে আবারো বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
সেখান থেকে খুশদিল শাহর সঙ্গে ৬৩ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন বাবর। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় খুশদিলকে টেলরের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান ডানহাতি পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। আউট হওয়ার আগে ৩৩ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খুশদিল। তবে তখনও ক্রিজে আশার প্রদীপ হয়ে টিকে ছিলেন অধিনায়ক বাবর।
লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে একশত রানের জুটি গড়েন তিনি। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়াহাব। তবে ২৫১ রানের মাথায় ওয়াহাব (৫২) উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ বানান মুজারাবানি। ২৬৬ রানের সময় শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম আউট হলে নতুন করে বিপাকে পড়ে পাকিস্তান।
আউট হওয়ার আগে ১২৫ বলে ১২৫ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন অধিনায়ক বাবর। দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মুসা এবং মোহাম্মদ হাসনাইনের ব্যাটে অবশ্য শেষ ওভার পর্যন্ত গড়ায় ম্যাচটি।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। রিচার্ড এনগারাভার করা সেই ওভারের প্রথম বলে ৪ মেরে ব্যবধান কমান মুসা। এরপর দ্বিতীয় বল থেকে এক রান নিতে সক্ষম হন তিনি। হাসনাইনকে করা তিন নম্বর বলটি ডট হলে চাপ বৃদ্ধি হয় পাকিস্তানের।
পরবর্তীতে এনগারাভার চার এবং পাঁচ নম্বর বল থেকে যথাক্রমে ২ ও এক রান নেন হাসনাইন। শেষ বলে জয়ের জন্য ৫ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। সেই বলে এক্সট্রা কাভার অঞ্চল দিয়ে চার মেরে ম্যাচটি টাই করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান মুসা। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ১০ ওভারে ৪৯ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেন মুজারাবানি। আর দুটি করে উইকেট নেন এনগারাভা এবং তিরিপানো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২৭৮/৬ (৫০ ওভার) (উইলিয়ামস ১১৮*, টেলর ৫৬; হাসনাইন ৫/২৬, ওয়াহাব ১/৬৫)
পাকিস্তান: ২৭৮/৯ (৫০ ওভার) (বাবর ১২৫, ওয়াহাব ৫২; মুজারাবানি ৫/৪৯, তিরিপানো ২/৩৯)
ফলাফল: জিম্বাবুয়ে সুপার ওভারে জয়ী