অন্ধকার পেরিয়ে টেলরের ‘অভিষেকের’ আনন্দ

ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে

২০০৪ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় টেলরের। ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলে অবসর নেয়ার পর আগে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেন ৩৪ টেস্ট, ২০৫ ওয়ানডে এবং ৪৫ টি-টোয়েন্টি। লম্বা সময় জাতীয় দলের হয়ে খেলা ডানহাতি ব্যাটার একটা সময় মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইংলিশ কাউন্টিতে হ্যাম্পশায়ারের জার্সিতে খেলার সময় তাঁর মাদকাসক্তি বাড়তে থাকে।
হেনরি-ফকসের ৯ উইকেট, টেলরের প্রত্যাবর্তন ম্লান করে নিউজিল্যান্ডের লিড
৭ আগস্ট ২৫
এমনকি ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসেও ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে স্ত্রী কেলি অ্যানিকে সবকিছু খুলে বলেন তিনি। মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে জিম্বাবুয়ের ইস্টার্ন হাইল্যান্ডের একটি পুনবার্সন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয় তাকে। এমন কাজে পরিবারকে লজ্জায় ফেলার কারণে অপরাধবোধ কাজ করে তাঁর মাঝে।
এ প্রসঙ্গে টেলর বলেন, ‘পরিবারকে হতাশ ও লজ্জায় ফেলার অপরাধবোধ আমার সবসময়ই কাজ করে। এটাকে মোকাবেলা করা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু যেভাবে আমার পরিবার আমাকে সমর্থন করেছে সেটা অবিশ্বাস্য। আমার প্রায়শই অনুশোচনা হয় আগে কেন আমি পরিবারের উপর নির্ভর করিনি।’
১২ ধাপের পুনবার্সন প্রক্রিয়া শেষে নিজেকে পুরনো রূপে ফিরে পান টেলর। মাদকের নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পরিবার, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ও সবার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। টেলর বলেন, ‘এরপরই আসলে আনন্দ ও সুস্থতার সময়টা এলো। যা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমার জীবনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার কারণেই আজকে আমি এখানে আছি। আমি যদি জীবন বদলানোর সেই সিদ্ধান্ত না নিতাম তাহলে এটা সম্ভব হয়তো না।’

ফকসের ‘৯ উইকেটে’ নিউজিল্যান্ডের ৩৫৯ রানের জয়
৯ আগস্ট ২৫
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার আশেপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিল যারা কিনা আমাকে নতুন করে বাঁচার পথ দেখিয়েছে। সেটার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অল্প ক’জন মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, বিশেষ করে চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে—যারা আমাকে ফিরে পেতে সমর্থন দিয়ে গেছেন।’
পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তির আগেই সবধরনের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা পেতে হয় টেলরকে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে স্পন্সরশিপ ও জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চালু করতে আলোচনা করার জন্য টেলরকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার। ভারতে যাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার, একটি স্যামসাং এস-১০ মডেলের ফোন ও নতুন কাপড়চোপড় নিয়েছিলেন তিনি।
পাশাপাশি দুর্নীতির প্রস্তাবও পেয়েছিলেন টেলর। তবে সেই প্রস্তাবের কথা আইসিসিকে জানাতে দেরি করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ২০২১ সালে অবসর নেয়ার চার মাস পর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। টেলরের সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৫ জুলাই। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ও নিজের প্রচেষ্টায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছেন সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। কিউইদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামার আগে ব্রডকাস্টারের সঙ্গে নিজের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন ৩৯ বছর বয়সি এই ব্যাটার। যেখানে টেলর জানান, অভিষেকের অনুভূতি কাজ করছে তাঁর মাঝে। সেই সঙ্গে এও নিষেধাজ্ঞার সময়ে হতাশায় অন্ধকারে ডুবে থাকার গল্পও শুনিয়েছেন তিনি।
টেলর বলেন, 'কতই না ভালো আছি এখন, আমি তখন বিছানার বাইরে যেতে পারতাম না। অথচ এখন আমি সেটাই করছি যা আমি ভালোবাসি। আর সেটা হচ্ছে জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধিত্ব করা। নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে লড়াই করে, নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে (উঠেছি), এমন কোনো দিন ছিল না যেদিন ট্রমা ছিল না। তিরস্কারের মাঝে আমি ডুবে ছিলাম এবং এসব কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিলাম। মনোবল পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছিল। এটা সত্যিই অনেক কঠিন ছিল।’
ভিন্ন আরেকটি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে যে ধরনের অনুশীলন করেছে এখানে ফেরার জন্য তার চেয়েও কঠোরভাবে অনুশীলন করেছি। যদি পারফরম্যান্স করতে পারি তাহলে দারুণ ব্যাপার হবে। বড় একটা পরিকল্পনা নিয়েই আমি এখানে খেলছি। আবারও খেলতে পারাটা সম্মানের। অনেকটা অভিষেকের অনুভূতি।’