তিন সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে হতাশ করে ম্যানচেস্টারে ভারতের ড্র

ছবি: বিসিসিআই

ক্যামেরার লেন্স তখন তাক করে একটু সময় নিয়ে ধরে রাখা হলো ড্রেসিং রুমে বসে থাকা শুভমান গিলের দিকে। তবে ভারতের অধিনায়ক দুই ব্যাটারের কাউকেই কোনো ইশারা দিলেন না। ভারত যে ড্র মেনে নেয়নি সেটা অনুমান করা গেছে তাতেই। জাদেজার কাছে এসে স্টোকস বুঝানোর চেষ্টা করলেও বাঁহাতি ব্যাটার সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারব না। আমার হাতে কিছু নেই।’ খানিকটা গোমরা মুখ নিয়েই দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরির কাজটা দ্রুত সারতেই হ্যারি ব্রুকের হাতে বল তুলে দিলেন স্টোকস। আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে কাজটা সারতে বেশি সময় নিলেন না দুইজনের কেউই।
আরেকটি সেঞ্চুরিতে ব্র্যাডম্যান-কোহলি-স্মিথকে ছাড়িয়ে গেলেন গিল
৭ ঘন্টা আগে
ব্রুকের দ্বিতীয় ওভারে ছক্কা মেরে ১৮২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন জাদেজা। ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের সঙ্গে ভারতের হারটাও এড়িয়েছেন তিনি। আরেক ব্যাটার ওয়াশিংটনও কম গেলেন না। জো রুটকে হ্যাটট্রিক চার মেরে নব্বইয়ের ঘরে গেলেন। ৯৫ থেকে ব্রুককে চার মেরে সেঞ্চুরির আরও কাছে গেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এক বল পর অন সাইডে ঠেলে দিয়ে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তাতেই ড্র মেনে নিলেন দুই দলের অধিনায়ক। গিল, ওয়াশিংটন ও জাদেজার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ড্র করেছে ভারত। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সিরিজ নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ওভাল টেস্টের জন্য।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে আগের দিনের ২ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে সকালের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামেন রাহুল ও গিল। শূন্য রানে ২ উইকেট হারানোর পর ভারতকে বিপদ থেকে টেনে তুলেছিলেন তারা দুজন। একটু একটু করে সফরকারীদের ইনিংস হারানোর আশা দেখাতে থাকেন রাহুল ও গিল। তবে চতুর্থ টেস্টের পঞ্চম দিনের সকালের শুরুতেই রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। চোটের কারণে শেষদিনে এসে বেন স্টোকস বোলিং করতে পারবেন কিনা সেটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। তবে বল হাতে নিয়েই স্বাগতিকদের উইকেট এনে দেন তিনি।

রেকর্ড নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই: রুট
১১ ঘন্টা আগে
ইংল্যান্ডের অধিনায়কের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৯০ রানের ইনিংস খেলা রাহুল। অভিজ্ঞ ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে গিলের সঙ্গে ১৮৮ রানের জুটি। ডানহাতি ওপেনার ফিরলেও অন্যপ্রান্ত আগলে রাখেন গিল। ১৯২ বলে ৯০ ছোঁয়ার পর একটুখানি সাবধানী হয়ে ওঠেন ভারতের অধিনায়ক। ক্রিস ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পয়েন্ট ঠেলে দিয়ে ২২৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। সেঞ্চুরির জন্য পরের ১০ রান করতে ৩৬ খেলতে হয়েছে তাকে। ২০০৭ সালে থেকে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে নব্বই থেকে একশ রানের মাঝে সবচেয়ে বেশি খেলা ইনিংস আছে তিনটি।
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির চলতি সিরিজে গিলের একটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে নাম লিখিয়েছেন তিনি। তবে আরেকটি রেকর্ডে ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে গেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজে গিলের চেয়ে সেঞ্চুরি নেই কারও। তিনটি করে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং, ব্র্যাডম্যান, গ্রেগ চ্যাপেল, বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথের। সেঞ্চুরির আগে অবশ্য আরেকটি রেকর্ডে গাভাস্কার ও ইয়াশভি জয়সাওয়ালকে ছুঁয়েছেন গিল।
ভারতের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে কোনো এক সিরিজে ৭০০—এর বেশি রান করেছেন তরুণ এই ব্যাটার। সেঞ্চুরির একটু পরই গিলকে ফেরান জফরা আর্চার। ডানহাতি পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে জেমি স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৩৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে। অধিনায়ক ফেরার পর ভারতের হয়ে হাল ধরেন ওয়াশিংটন ও জাদেজা। শুরু থেকেই একদম দেখেশুনে খেলছিলেন ওয়াশিংটন। সাবধানী ব্যাটিংয়ে বাঁহাতি ব্যাটার পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১১৭ বলে। আরেক ব্যাটার জাদেজা হাফ সেঞ্চুরি করতে খেলেছেন ৮৬ বল।
ইংল্যান্ডে চলতি সফরে পাঁচটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন জাদেজা। ১৯৬৬ সালে করা স্যার গ্যারি সোবার্সের পর জাদেজাই প্রথম। এ ছাড়া ভিভিএস লক্ষণের পর ভারতের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এক সিরিজে ছয় কিংবা তাঁর নিচে ব্যাটিং করে পাঁচটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন তিনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে একশ রানের জুটিও গড়েছেন তারা। চলতি সফরে ভারতের একটি দশম শতরানের জুটি। মাঝে ইনিংস হারের শঙ্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে লিডও নেয় ভারত। দ্রুততার সঙ্গে রান তুলে ভারতের লিড বাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়াশিংটন ও জাদেজা। তাদের দুজনের সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে খুশি থাকতে হয়েছে ভারতকে।