হ্যাটস অফ টু কোহলি

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
১৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে হারল কোহলিরা
২২ ঘন্টা আগে
‘হ্যাটস অফ টু কোহলি’ প্রেজেন্টেশনে এসে বলতে দ্বিধা করলেন না রোহিত শর্মা। অমন ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতানোর পর কোহলিকে কুর্নিশ না করে উপায় বোধ হয় নেই। চাপ, প্রত্যাশা, উত্তেজনা কিংবা রোমাঞ্চ ছড়ানো, কি ছিল না এই ম্যাচে? এতসবের মাঝে মেলবোর্নের ৯০ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে এমন ম্যাচ জয়ী ইনিংস তো কোহলিকেই মানায়। অথচ বিশ্বকাপ দলের বোঝা হওয়ার কথা ছিল সময়ের অন্যতম সেরার। অথচ হয়ে গেলেন নায়ক।
অফ ফর্ম, কালো মেঘের আড়ালে ডেকে যাওয়া কিংবা রানের জন্য হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ানো কোহলি কখনই নিজেকে হারাতে দেননি। পরিশ্রম দিয়ে নিজের আকাশের সেই কালো মেঘ সরিয়েছেন কোহলি। মেলবোর্নের আকাশের সবটা আলো একার করে নিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন আর্শদ্বীপ সিং কিংবা হার্দিক পান্ডিয়া। হালকা ঘাসের উইকেট থেকে সুইং আর বাউন্স সবটা কাজে লাগালেন আর্শদ্বীপ। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরিয়ে শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতকে এনে দেন বাঁহাতি এই পেসার।
মাঝে হার্দিক আরও একবার দুবাই ফেরালেন। মেলবোর্নে এদিন অলরাউন্ডার ৩ উইকেট নেয়ার সঙ্গে ব্যাটিংয়ে করলেন ৪০ রান। কোহলির সঙ্গে গড়লেন ম্যাচ জেতানো জুটিও। ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে ম্যাচ একাই ছিনিয়ে এনেছেন কোহলি। মাত্র ৩১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর নিশ্চিতভাবেই জয়ের আশা করেননি ভারতীয় সমর্থকরা। পাকিস্তানের আঁটসাঁট বোলিংয়ে কোনভাবেই যেন খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারছিলেন না কোহলি।
পাওয়ার প্লে শেষ হলেও এক রান বের করতেও বেগ পেতে হচ্ছিলো তার। তাতে নিজের প্রথম ২০ বলে ১১ রান করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে হার্দিক হাতখুলে খেলতে শুরুর করার পর খানিকটা সাহস পান কোহলিও। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে ছক্কা মেরে বল আর রানের ব্যবধান খানিকটা কমিয়ে আনেন তিনি। তখনও নিজের জোনে খেলতে পারছিলেন না কোহলি। ম্যাচ জিততে শেষ তিন ওভারে ভারতের প্রয়োজন ৪৮ রান।
এমন সময়ই নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। শাহিন শাহ আফ্রিদির হার্ড লেংথ ডেলভারিতে প্রথম বলেই ডিপ মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে শুরুটা করেন কোহলি। সেই ওভারে চার মেরেছেন আরও দুটি। তবে কোহলির শট চোখে লাগবে ১৯তম ওভারে। হারিস রউফের ওভারে পঞ্চম বল, ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে আলতো করে বোলারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন কোহলি।

এই শট দেখার পর আপনার সেরা সময়ের কোহলির কথা মনে হতে পারে। ভাবতেই পারেন কোহলি ফুরান, কোহলিরাও ফুরান না। কোহলিরা চোখের জন্য কেবলই প্রশান্তির। পরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ফাইন লেগ ফ্লিক করে আবারও ছক্কা। এই কোহলিকে যেন থামাবার নেই। থামাতেও পারেনি পাকিস্তান। শেষ ওভারে নওয়াজের বলেও ছক্কা মেরেছেন, ভারতকে ৪ উইকেটে অসম্ভব ম্যাচ জিতিয়েছেন। তবে শেষ ওভারটা ছিল নাটকীয়তা ছিল শিখরে।
বাবরের পছন্দের সেরা একাদশে রোহিত-সূর্যকুমার, নেই কোহলি
১৭ মে ২৫
ঠাণ্ডা মাথায় রবিচন্দ্রন অশ্বিন মিড অফের উপর দিয়ে তুলে দেয়ার আগে নওয়াজের ওভারে আউট হয়েছেন হার্দিক আর দীনেশ কার্তিক। সঙ্গে ছিল নওয়াজের ওয়াইড আর নো বল কাণ্ড। সব ছাপিয়ে মেলবোর্নে পাকিস্তানের ম্যাচ ছিনিয়ে নেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে। রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে জিতেছেন সেরার পুরস্কারও। মেলবোর্নে নায়ক বনে যাওয়া কোহলিকে তাই কুর্নিশ করতে কার্পণ্য করেননি কেউই।
বিরাট কোহলিকে কাঁধে নিয়ে জয় উদযাপন করছেন রোহিত শর্মা
এদিন তাই ম্যাচ শেষে অধিনায়ক রোহিত বলেই বসলেন, ‘হ্যাটস অফ টু কোহলি।’ সময়ের অন্যতম সেরার মুগ্ধতায় যখন পুরো বিশ্ব ডুবে গেছে তখন ভাষাহীন হয়ে পড়েছিলেন কোহলি। ভারতের দর্শকদের আত্মচিৎকার তার কাছে খানিকটা পরাবাস্তব মনে হচ্ছিলো। প্রেজেন্টেশনে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিতে এসে বারবারই বলছিলেন তিনি কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবুও কোহলি বললেন, শোনালেন পাকিস্তানের কাছ থেকে অসম্ভব ম্যাচ ছিনিয়ে আনার কথা।
কোহলি বলেন, ‘এটা একেবারে পরাবাস্তব পরিবেশ। সত্যি বলতে আমার কাছে কোন ভাষা নেই। আমি জানি না কিভাবে এটা ঘটলো। হার্দিক আমাকে বলেই যাচ্ছিলো, ‘বিশ্বাস রাখো, আমরা শেষ পর্যন্ত থাকতে পারি।’ আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি মনে করি, প্যাভিলিয়ন প্রান্ত থেকে শাহীন যখন বল করছিলো তখন আমি হার্দিককে বলেছিলাম আমরা তাকে অ্যাটাক করবো। সমীকরণটা খুবই সহজ ছিল।’
‘নওয়াজের এক ওভার ছিল। আমরা যদি হারিসকে অ্যাটাক করি তাহলে তারা প্যানিক করবে। তখন সেটা ৬ বলে ১৬ রানে আসলো। আমি আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এটা (হারিসকে ২ ছক্কা মারা) দেখেছি এবং নিজেকে স্থির থাকতে বলেছি। লং অনের ছক্কা অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ এটা ব্যাক অব লেংথের স্লোয়ার বল ছিল। আর ফাইন লেগেরটাতে আমি শুধু ব্যাটটা চালিয়েছি।’
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ভারতকে জিতিয়েছিলেন কোহলি। পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারানোর পরও সেদিন ৫১ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটারের। সবসময়ই মোহালির সেই ইনিংসকেই নিজের টি-টোয়েন্টির সেরা বলতেন তিনি। মেলবোর্নের ইনিংসকেও স্পেশালের কাতারে রাখছেন কোহলি।
তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত মোহালির ইনিংসটি টি-টোয়েন্টিতে আমার সেরা ছিল। এরপর আমি ৫২ বলে ৮২ রান করেছি, আজ ৫৩ বলে ৮২ রান করেছি। উভয়ই আমার কাছে স্পেশাল।’
সর্বশেষ তিন বছরে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করেছেন কোহলি। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। নিজের খারাপ সময়ে সমর্থন দেয়া সবাইকে তাই শেষটায় ধন্যবাদ দিয়েছেন কোহলি।